প্রজননকৃত ডিম থেকে ইলিশ উৎপাদন নির্বিঘœ করতে আজ মধ্যরাত থেকে জাটকা আহরনে ৮ মাসের নিষেধাজ্ঞা
৩১ অক্টোবর ২০২৪, ০৩:০৫ পিএম | আপডেট: ৩১ অক্টোবর ২০২৪, ০৩:০৬ পিএম
মূল প্রজননকালে ইলিশের ডিম থেকে লার্ভা পরিস্ফুটনের মাধ্যমে পোনা উৎপাদনের সাথে আজ (বৃহস্পতিবার) মধ্যরাতেই সারা দেশে জাটকা আহরন,পরিবহন ও বিপননে নিশেষধাজ্ঞা কার্যকর হচ্ছে। আগামী ৩০জুন পর্যন্ত এ নিষেধাজ্ঞাকালে সরকার ঘোষিত ৬টি অভায়শ্রম সহ সারা দেশে ১০ ইঞ্চি পর্যন্ত ইলিশ পোনা-জাটকা আহরন, পরিবহন ও বিপনন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ থাকবে বলে সরকার ইতোমধ্যে গেজেট বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। অপরদিকে নিরাপদ প্রজনন নিশ্চিত ও নির্বিঘœ করতে গত ১৩ অক্টোবর মধ্যরাত থেকে দেশের উপক’লীয় ৭ হাজার ৩৪৩ বর্গ কিলোমিটার প্রজনন ক্ষেত্রে সব ধরনের মাছ সহ সারা দেশেই ইলিশ আহরন, পরিবহন ও বিপননে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হচ্ছে ৩ নভেম্বর মধ্য রাতে।
মৎস্য বিজ্ঞানীদের সুপারিশের আলোকে প্রতি বছরই মূল প্রজননকাল হিসেবে আশি^নের বড় পূর্ণিমার আগে পরে ২২দিন উপক’লীয় প্রজনন এলাকা সহ সারা দেশে ইলিশ আহরন নিষিদ্ধ থাকছে। এসময়কালে মা ইলিশের নির্গত ডিম থেকে লার্ভা হয়ে বাচ্চা পরিস্ফুটনের পরে তা জাটকা থেকে পূর্ণাঙ্গ ইলিশে রূপান্তর নির্বিঘœ ও সহজত করতে নভেম্বর থেকে জুন পর্যন্ত জাটকা আহরন নিষিদ্ধ থাকছে। মৎস্য বিজ্ঞানীদের মতে প্রজনন মৌসুমে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা সহ সাগরে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা এবং জাটকা আহরনে টানা ৮ মাসের এ নিষেধাজ্ঞার ফলে দেশে গত দুই দশকে ইলিশের উৎপাদন ও সহনীয় আহরন ২ লাখ টন থেকে প্রায় পৌনে ৬ লাখ টনে উন্নীত হয়েছে।
এবারো জাটকা আহরনে নিষেধাজ্ঞা বলবত করতে বরিশাল সহ সন্নিহিত উপকূলীয় এলাকায় প্রশাসনের সহায়তায় ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা সহ মৎস্য বিভাগের নানা ধরনের অভিযান পরিচালিত হবে বলে অধিদপ্তর জানিয়েছে। এসব অভিযানের পাশাপাশি জাটকা নিধন বন্ধে পুলিশের পাশাপাশি নৌ বহিনী, কোষ্ট গার্ড, র্যাব ও নৌ পুলিশ অভ্যন্তরীন নদ-নদী ও উপক’লীয় এলাকায় নজরদারী চালাবে বলেও জানা গেছে।
মৎস্য অধিদপ্তরের মতে, দেশে এখনো নিষিদ্ধ ঘোষিত কারেন্ট জাল ও বেহুন্দি জাল সহ অন্যন্য ক্ষতিকর মৎস্য আাহরন উপকরনের সাহায্যে যে পরিমান জাটকা আহরন হয়, তার এক-দশমাংশ রক্ষা করা গেলেও বছরে আরো অন্তত ১ লাখ টন ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধি পেত। তবে নজরদারী বৃদ্ধির ফলে দেশে জাটকা’র উৎপাদন ২০১৫ সালে ৩৯,২৬৮ কোটি থেকে ২০১৭ সালে ৪২,২৭৪ কোটিতে উন্নীত হয়। এমনকি ২০২২ সালের প্রজনন মৌসুমে দক্ষিণ উপক’ল সহ সংলগ্ন অভ্যন্তরীন নদ-নদীতে প্রায় ৮৪% মা ইলিশ ডিম ছাড়ে। এরমধ্যে ৫২ ভাগ মা ইলিশ ২২ দিনের মূল প্রজননকালীন সময়ে এবং আরো ৩২% ডিম ছাড়ারত ছিল। যা ছিল অগের বছরের প্রজননকালের চেয়ে প্রায় ২.৪৫% বেশী। গতবছর এবং চলতি বছরও ইলিশের প্রজনন ও পরিস্ফুটনের হার তুলনামূলকভাবে বাড়ছে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন মৎস্য গবেষনা ইনস্টিটিউট ও অধিদপ্তরের দায়িত্বশীল মহল।
জাটকা আহরন ও বিপনন নিষিদ্ধকালীন সময়ে দেশের ৬টি অভয়াশ্রমে পর্যায়ক্রমে সব ধরনের মৎস্য আহরনও নিষিদ্ধ থাকবে। মৎস্য বিজ্ঞানীদের মতে, শ্রোতের বিপরিতে প্রতিদিন ৭১ কিলোমিটার পর্যন্ত ছুটে চলতে সক্ষম ‘অভিপ্রয়াণী ইলিশ’ জীবনচক্রে স্বাদু পানি থেকে সমুদ্রের নোনা পানিতে এবং সেখান থেকে পুনরায় স্বাদু পানিতে অভিপ্রয়াণ করে। উপক’লের ৭ হাজার ৩৪৩ বর্গ কিলোমিটারের মূল প্রজনন ক্ষেত্রে মূক্তভাবে ভাসমান ডিম ছাড়ার পরে তা থেকে ফুটে বের হওয়া ইলিশের লার্ভা, স্বাদু পানি ও নোনা পানির নর্সারী ক্ষেত্রসমুহে বিচরন করে। এরা খাবার খেয়ে বড় হতে থাকে। নার্সারী ক্ষেত্রসমুহে ৭Ñ১০ সপ্তাহ ভেসে বেড়াবার পরে জাটকা হিসেব সমুদ্রে চলে যায় পরিপক্কতা অর্জনে। বঙ্গোপসাগরের বিভিন্ন এলাকায় ১২Ñ১৮ মাস অবস্থানের পরে পরিপক্ক হয়েই প্রজননক্ষম ইলিশ হিসেবে আবার স্বাদু পানির নার্সারী ক্ষেত্রে ফিরে এসে ডিম ছাড়ে।
মৎস্য বিজ্ঞানীগনের সুপারিশে সমুদ্রে যাবার সময় পর্যন্ত যেসব এলাকায় জাটকা বিচরন করে খাদ্য গ্রহন সহ বেড়ে ওঠে, সেগুলোকে ‘গুরুত্বপূর্ণ নার্সারী ক্ষেত্র’ হিসেবে চিহিৃত করে ‘অভয়াশ্রম’ ঘোষনা করা হয়েছে। ষাটনল থেকে চর আলেকজান্ডার পর্য়ন্ত ১শ কিলোমিটার, মদনপুর থেকে চর ইলিশা হয়ে চর পিয়াল পর্যন্ত মেঘনার শাহবাজপুর চ্যানেলের ৯০ কিলোমিটার, ভেদুরিয়া থেকে পটুয়াখালী চর রুস্তম পর্যন্ত তেতুুলিয়া নদীর ১শ কিলোমিটার, খেপুপাড়ার আন্ধারমানিক নদীর ৪০ কিলোমিটার, নড়িয়া থেকে ভেদরগঞ্জ নিম্ন পদ্মার ১২০ কিলোমিটার এবং হিজলা ও মেহদিগঞ্জের লতা, নয়া ভাঙ্গনী ও ধর্মগঞ্জ নদীর মিলনস্থলের ৬০ কিলোমিটার সহ মোট ৬টি অভয়াশ্রমে নভেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে ইলিশ আহরন নিষিদ্ধ করায় উৎপাদন বাড়ছে।
জাটকা আহরন বন্ধে মৎস্য অধিদপ্তর থেকে ইতোমধ্যে বরিশাল সহ উপক’লভাগের সবগুলো উপজেলা থেকে ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। এ লক্ষ্যে প্রচার-প্রচানাও শুরু হয়েছে। তবে মৎস্য বিজ্ঞানীদের মতে, দেশে নিষিদ্ধ ঘোষিত কারেন্ট জাল ও বেহুন্দি জাল সহ অন্যন্য ক্ষতিকর মৎস্য আহরন উপকরনের ব্যবহার বন্ধে আরো কঠোর নজরদারী সহ তা কার্যকর ভাবে তা বন্ধের কোন বিকল্প নেই। ৩১-১০-২০২৪.
বিভাগ : বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
কমলা জয়ী হলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হবে: ট্রাম্প
সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে ময়মনসিংহ উত্তর ছাত্রদলের সহ-সভাপতি মাহাদীকে বহিস্কার
ইন্দুরকানীতে বিএনপির মিছিলে প্রকাশ্যে গুলির মামলায় মাদ্রাসা সুপার গ্রেফতার
এবার দূরপাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা করল উত্তর কোরিয়া
পূর্বে নামে ফিরল ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
ফরিদপুরে দালালের খপ্পরে পড়ে নিঃস্ব লিবিয়া ফেরত আসাদ: মামলা করায় পাল্টা হুমকি
শেখ হাসিনা এই দেশে যেন আর রাজনীতি করতে না পারে: ফারুক
অভিনব প্রচারণা, এবার পরিচ্ছন্নতাকর্মী সাজলেন ট্রাম্প
বিশাল ব্যবধানে হেরে ধবলধোলাই হলো বাংলাদেশ
ঈশ্বরগঞ্জে আলোচিত জিয়ারুল হত্যা মামলার প্রধান আসামিসহ গ্রেফতার ২
যশোরের ঘরের মেঝেতে পড়েছিল গৃহবধূর রক্তাক্ত মরদেহ
নোবিপ্রবি ছাত্রের আকস্মিক মৃত্যুর ঘটনায় উপাচার্যের মতবিনিময়
মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নে মেগা চুরি হয়েছে : দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য
মিরপুরে পোশাক শ্রমিকদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংঘর্ষ, দুই পোশাকশ্রমিক গুলিবিদ্ধ
চৌদ্দগ্রামে খাবার হোটেলের আড়ালে মাদক বিক্রি, আটক ৭
সড়কের পাশে থাকা ডাস্টবিন থেকে বর্জ্যরে দুর্গন্ধ ছড়ায়- খুলনায় গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা
সপরিবারে সাবেক এমপি হাবিবের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা, ছেলের নামে কানাডায় বাড়ি ও বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগ
কুয়াকাটায় অটোভ্যান-মোটরসাইকেল মুখোমুখি সংঘর্ষ-আহত-৪
ঈশ্বরগঞ্জে জিয়ারুল হত্যা মামলার প্রধান আসামিসহ গ্রেফতার ২
গ্রামের আঁকাবাঁকা মেঠো পথে ধীরে ধীরে বয়ে চলা গরুর গাড়ি আটঘরিয়ায় এখন চোখে পড়ে না